Cheerভালবাসার সাতকাহন ( ধারাবাহিক গল্পঃ পর্ব-১) Good Luck

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১৩ অক্টোবর, ২০১৪, ০৬:১৬:০৭ সন্ধ্যা



১.

রিক্সাটি এসে বাস স্ট্যান্ডে থামতেই সে চারিদিকে তাকায়। চারলেইনের রাস্তার উভয় দিক দিয়েই গাড়িগুলো ছুটে চলেছে।

অন্তহীন ছুটে চলা!

গতি... এই-ই তো জীবন!!

একটু কি ক্লান্ত বোধ করে? ঈদের বন্ধ আজ শেষ হবে।আগামীকাল থেকে আবার সেই রুটিন জীবন। মানব থেকে যন্ত্রে পরিণত হওয়া। কাল সকালে গেলেও চলত। কিন্তু এই দুপুরেই কেন যে বের হলো! ... ...

রিক্সাওয়ালা ওর দিকে তাকাতেই শিহাব সম্বিৎ ফিরে পায়। ব্যাকপকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে। দশ টাকার কয়েকটি নোটের ভিতর থেকে চকচকে নোটটি-ই বের করে রিক্সাওয়ালার হাতে দেয়। পীঠের ঝোলানো ট্রাভেল ব্যাগটির ড্র-কর্ড বাম কাঁধের কাছে লুজ হয়ে আছে। ওটা ঠিক করে যাত্রী ছাউনির দিকে আগায়।

অনেক মানুষ এক যায়গায় কেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে অপেক্ষা করছে। একের পর বাস আসছে। কিন্ত প্রচন্ড ভীড়। ছাদেও মানুষ বসে আছে। সব কেমন যেন ম্রিয়মান। অথচ এরা ঈদে বাড়ি যাবার সময়ও ছাদে করে গিয়েছে। তখন কত হই-হুল্লোড় করেই না গিয়েছিল... আর এখন ফিরবার সময়ে কতটা নিস্তেজ হয়ে ফিরছে। যার যার নাড়ির থেকে জোর করে ফিরে আসছে এরা। ইটপাথরের এই নগর জীবনে এক একজন রোবট হতে ফিরে আসছে এরা। মাত্র আটদিনের মানব জীবন কাটিয়ে রোবট জীবনে ফিরে আসার ভাবনাটা শিহাবকে কেমন যেন ব্যথাতুর করে তোলে।

বাসে উঠার চিন্তা বাদ দেয়। একটি সি.এন.জি ট্যাক্সি এসে থামতেই ড্রাইভারের পাশে সে বসে যায়। মুহুর্তেই যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে নবীনগরের দিকে ছুটে চলে ট্যাক্সিটি। দু'পাশে দ্রুত ধাবমান গাছগুলোকে দেখতে দেখতে শিহাব ভাবনার ভ্রান্তিজালে আটকে যেতে থাকে। আসলেই ভাবনাগুলো সব ভ্রান্তির জালে আটকে থাকে। চোখে যা দেখা যায়, সেগুলোই তো ভাবনায় এসে ভর করে। যা দেখি সবই কি সঠিক? এই যে গাছগুলোকে উল্টো দিকে ছুটে যেতে দেখা যাচ্ছে, আদতেই কি এটি তেমনই ছুটছে? ট্যাক্সির ছুটে চলাতেই সেগুলোকে স্থির থাকার পরেও গতিময় মনে হচ্ছে।

এই মনে হওয়াটাতো ভুল।

ইদানিং শিহাবের দেখার ভিতরেও এরকম অনেক ভুল হচ্ছে। আর এই দেখার সাথে লিংক থাকাতে শোনার এবং ভাবনা-চিন্তাতেও ভুল হচ্ছে। এগুলোর সমন্বিত যোগসূত্রে যত ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি।

কেন যেন একটু হালকা লাগে শিহাবের।

পড়ন্ত বেলার আলো রাস্তার পাশের অ্যাকাশিয়া গাছের পাতাগুলোকে উজ্জ্বল করে তুলেছে। সেদিকে একপলক তাকিয়ে শিহাবের মনের ভিতর অন্য এক আলো জ্বলে উঠল। সেই আলোয় একটি অভিমানী মুখের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠলো। অন্য দিকে ফিরে এক হাতে ঠেক দিয়ে বসে থাকা অভিমানী বউ!

চলে আসার সময়ও কথা হল না। দেখা আর শোনার ভুলের কারণে শুধু শুধু ভুল বোঝাবুঝি.. দু'জনের দু'প্রান্তে অবস্থান... আর নিজে নিজে কষ্ট পাওয়া।

আচ্ছা, শিহাব যেমন কষ্ট পাচ্ছে, কণাও কি তেমনটাই অনুভব করছে?

শিহাব চলে আসার সময়ে অভিমানী বউটা একবারও ফিরে তাকালো না!

অথচ প্রতিবার কর্মস্থলে চলে আসার সময়ে বারান্দার শিকের পিছনে অটল দাঁড়িয়ে থাকা বউ এর হাসিমুখ ওকে চলে আসতে দিতে চাইত না। কেমন এক অপার্থিব কষ্ট হৃদয়কে চারপাশ থেকে আটকে ধরতে চাইত। একবার পিছন ফিরে শিহাব হাত নেড়ে সামনে আগাবার সময়ে ভাবতো-' এই দেখাই যদি শেষ দেখা হয়?' এজন্য মোড় ঘুরবার আগে শেষ একবার পিছু ফিরে তাকায়... প্রতিবারই... আর তখনো সেই অনিন্দ্য হাসিমুখ তখনো ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখতে পায়!

আজ চলে আসবার সময় বউ এর সেই হাসিমুখ বারান্দার গ্রীলের পিছনে সে দেখতে পেল না। প্রতিবারের মত সেই মুখটি যে কষ্ট এনে দিত, জোর করে সেই কষ্টগুলোকে ফিরিয়ে দিতে হতো, আজ সে নিজে ইচ্ছে করে সেই কষ্টকে যখন পেতে চাইল - শূন্য বারান্দা ওর সেই দুঃখবিলাসকে অবজ্ঞা করে ওর ইচ্ছেটার পরিসমাপ্তি ঘটালো বড্ড নির্মমভাবে।

একটা দীর্ঘশ্বাসের সাথে শিহাব উপলব্ধি করে, আসলেই সে কণার সাথে অন্যায় করেছে। রাগের মাথায় যা করেছে তা ঠিক হয়নি। আজ রাতটা অন্তত ওর সাথে থেকে ওর মান ভাঙ্গানো উচিত ছিল।

চকিতে একবার ভাবে শিহাব। নবীনগর এসে গেছে। ফিরে যাবে নাকি? পরক্ষণেই ভাবে, 'কি হবে ফিরে গেলে?' ট্যাক্সি থেকে নেমে ভাড়া মিটানোর সময় শিহাব ভাবতে থাকে।

এখনই সঠিক সময়। এরপর বেশী দেরী যাবে। আবার তো সেই বৃহস্পতিবার।

ফিরতে চাইলে দেরী হবার আগেই ফিরে যেতে হয়। প্রয়োজনে নিজেকে একটু ছোট করে হলেও... কিন্তু শিহাব কি ছোট হতে চায়?

. পলকের দ্বিধাদ্বন্দ্ব শিহাবকে একটু অস্থির করে তোলে। ঠিক তখনই গাজীপুরগামী বাসটি সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায় ।

'ধুস শালা! ' বলে শিহাব চিন্তা-ভাবনার গলা টিপে ধরে লাফ দিয়ে বাসে উঠে পড়ে। পিছনে পড়ে থাকে ওর চেতনায় গ্রীলের পিছনে থাকা একটি হাসিমুখ। যে মুখটি ঠিক এই মুহুর্তে হয়তো বিষন্নতার মূর্ত প্রতীক।

হয়তো... ... ...

অনেকক্ষণ সোফায় বসে থাকে কণা।

মানুষটা চলে গেলো!

একবার ওকে ডাকলও না? না কি ডেকেছিল? সে শুনতে পায়নি... হয়তো।

তার ডাক সে কি তখন শুনতে চেয়েছিল?

তবে এখন কেন আক্ষেপ 'একবারও ডাকল না' বলে?

সোফা থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে সে ডাইনিং টেবিলের দিকে তাকায়। খাবার গুলো অমনিই পড়ে আছে। না খেয়েই চলে গেলো মানুষটা!

দশ দিক থেকে

আবেগ কণার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে দখল নেয়।

দুই মেয়ে চুপচাপ বসে আছে। একটু দূরে। মা'কে আড়চোখে লক্ষ্য করছে দু'জনেই। নিজেকে সামলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ কণার অবদমিত কান্না হৃদয়ের গভীর থেকে বের হয়ে আসে... দু'চোখ বেয়ে ঝরঝর দুই ধারায় অঝোরে নেমে যেতে থাকে। কতদূর যায়? কতটা ভেজায়? কতটা ধোয়?

কণা'র চেতনা জুড়ে শিহাব নামের মানুষটার কষ্ট। যে মানুষটা না খেয়ে চলে গেছে... যে ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে না... আর যাবার বেলায় ওকে একবারও ডাকল না... প্রতিবারের মত...

রাস্তায় নেমে পিছু ফিরে ওকে কি দেখেছিলো আজ? ... মোড় ঘুরে অদৃশ্য হবার সময়টিতে আরো একবার পিছু ফিরে দূর থেকে ওর অবয়ব দেখবার চেষ্টা করেছিলো? খালি বারান্দাটা দেখে কি তার মন আরো খারাপ হয়ে গেছে?

এটাই যদি শেষ দেখা হয়?!

হঠাৎ কণার মনের ভিতর কোথাও একটা জায়গাকে প্রচন্ড একটা কষ্ট খামচে টেনে ধরে।

কষ্টটা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার আগেই পায়ে পায়ে মেয়েরা মায়ের একেবারে কাছে চলে আসে। ঠিক ততোটাই দূরে চলে যায় শিহাব নামের ওর প্রিয় মানুষটি। অদুরে পড়ে থাকা মোবাইল সেটটির দিকে একপলক তাকায় কণা। ঝাপসা লাগে সেটটিকে।

এই ঝাপসা যন্ত্রটি কি পারবে দূরে চলে যাওয়া কাউকে কাছে এনে দিতে? হৃদয়ের টানাপোড়েন মিটাতে এক মানবী শেষ পর্যন্ত যন্ত্রের দ্বারস্থ হবে?

ভাবতে থাকে কণা।

মেয়েদের উপস্থিতি ভুলে গিয়ে আনমনে সোফা থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় কণা ।

সেই চেনা পথে আজ সব অচেনা মানুষ! গ্রীলে কপাল ঠেকিয়ে ইস্পাতের শীতলতা অনুভব করে। তাতে হৃদয়ের উত্তপ্ততা একটুও কমে কি?

যে পথটি ধরে শিহাব চলে গেছে- সেই মোড় পর্যন্ত দৃষ্টিকে প্রসারিত করে আনমনা হয়ে পড়ে।

বিষন্ন একজন অভিমানী!

হৃদয়ে জ্বলন্ত ভালবাসার ফল্গুধারা বয়ে নিয়ে চলা এক মায়াবী রমণী একটু শীতলতার প্রত্যাশায় পথপানে চেয়েই থাকে.... Good Luck

(ক্রমশঃ)

বিষয়: সাহিত্য

৯৫৯ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

273971
১৩ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৫
নিরবে লিখেছেন : বলার ভাষা নেই । Applause Applause Applause
চালিয়ে যান।
১৩ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০২
217948
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে।
আমার ব্লগে স্বাগতম!
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
274077
১৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:২৫
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

শেষে বড় করে মন্তব্য করবো ইনশাআল্লাহ

চলতে থাকুক, সফল সমাপ্তির জন্য দোয়া করি

১৪ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:০২
218080
মামুন লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..
প্রেরণা দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আল্লাহপাক আপনার দোয়া কবুল করুন-আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
274109
১৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০২:৫৩
আফরা লিখেছেন : জমবে ভালই মনে হচ্ছে । চলুক সাথে থাকব ইনশা আল্লাহ ।
১৪ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:০৩
218081
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ 'প্রিয় বোন' আমার।
সাথে থেকে অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Happy Good Luck Good Luck
274114
১৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৩:০৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : Chalam. Keep going...
১৪ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:০৩
218082
মামুন লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম আপু।
অনুভুতি রেখে গেলেন, অনেক ভালো লাগলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
274115
১৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৩:০৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : Mamun vaiya if it is possible 4 u cud u plz get registered with lighthouse so I can contact 2 u by message. Thx
১৪ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:০৪
218083
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ।
আপনি আমাকে লাইটহাউসের লিংকটা দিয়ে দিলে চেষ্টা করতে পারি।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
274175
১৪ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:০২
কাহাফ লিখেছেন :

.....আসলেই অন্যায় হয়েছে। কিন্তু অবহেলাই বা কত সহ্য করা যায়! রাগের মাথায় কাজগুলো করা একদমই ঠিক হয়নি। উপলব্ধিটা মাথায় ঘুরপাক খায় শুধু, এতেই কী স্বাভাবিক হবে সব.......!!
অসাধারণ উপলব্ধময় সুন্দর লেখনীর জন্য ধন্যবাদ ধন্যবাদ ও ধন্যবাদ। Rose
১৪ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ১২:১৭
218123
মামুন লিখেছেন : আপনার বক্তব্যের সাথে সহমত।
অসাধারণ অনুভূতি রেখে যাবার জন্য আপনাকেও অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Happy Good Luck Good Luck
274311
১৪ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:০৬
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ভালো লাগল!! চালিয়ে যান!
১৪ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:১৩
218246
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ অনুভূতি রেখে যাবার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File